পরিপাকতন্ত্র / ঘাস ফড়িং

 

ঘাস ফড়িংয়ের পরিপাকতন্ত্র

এই পাঠে যা রয়েছে-
  1. ঘাসফড়িংয়ের পরিপাকতন্ত্র (Digestive system of Grasshopper)
    • (ক) পরিপাক নালি (Alimentary canal)
      • ১। অগ্র পৌষ্টিকনালি (Foregut)
        • মুখগহ্বর
        • ক্রপ
        • গিজার্ড
      • ২। মধ্য পৌষ্ঠিকনালি (Midgut)
        • পেরিট্রফিক পর্দা
        • পাকস্থলী
        • গ্যাস্ট্রিক সিকা/হেপাটিক সিকা
      • ৩। পশ্চাৎ পৌষ্টিকনালি (Hindgut)
        • ইলিয়াম
        • মালপিজিয়ান নালিকা
        • কোলন
        • মলাশয়/রেকটাম
        • পায়ু
    • (খ)পরিপাক গ্রন্থি (DIGESTIVE GLAND)
  2. খাদ্যগ্রহণ এবং পরিপাক (FOOD, FEEDING AND DIGESTION)

ঘাসফড়িংয়ের পরিপাকতন্ত্র (Digestive system of Grasshopper)



পরিপাক নালি ও পরিপাক গ্রন্থি নিয়ে ঘাসফড়িংয়ের পরিপাকতন্ত্র গঠিত ।

(ক) পরিপাক নালি (Alimentary canal)

পরিপাকনালি তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা- অগ্র পৌষ্টিকনালি/পরিপাকনালি, মধ্য পৌষ্টিকনালি/পরিপাকনালি এবং পশ্চাৎপৌষ্টিকনালি/পরিপাকনালি।

<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-6535094297941162"

     crossorigin="anonymous"></script>

১। অগ্র পৌষ্টিকনালি (Foregut)

মুখছিদ্র, মুখগহ্বর, গলবিল, গ্রাসনালি, ক্রপ ও গিজার্ড নিয়ে অগ্র পৌষ্টিকনালি গঠিত। অগ্র পৌষ্টিকনালির প্রাচীরের ভিতরের দিকে কাইটিনের আস্তরণ থাকে।

মুখগহ্বর

ক্ষুদ্র মুখছিদ্র মুখগহ্বরে উন্মুক্ত হয় । মুখগহ্বর ম্যান্ডিবল ও ম্যাক্সিলা দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। ল্যাব্রাম মুখছিদ্রের উপরের ওঠে এবং ল্যাবিয়াম নিচের ওষ্ঠ গঠন করে। মুখছিদ্রের অঙ্কীয়তলে হাইপােফ্যারিংক্স থাকে।

মুখগহ্বর একটি সংক্ষিপ্ত নলাকার গলবিলে উন্মুক্ত হয় । গলবিল পাতলা প্রাচীর বিশিষ্ট।

ক্রপ

গলবিল প্রসারিত হয়ে থলির মতাে ক্রপ গঠন করে।ক্রপ খাদ্যের সঞ্চয় আধার হিসেবে কাজ করে।ক্রপে কোন পরিপাককারী এনজাইম নেই।

কাজঃ ক্রপে খাদ্য সাময়িকভাবে জমা থাকে ও এখানে খাদ্যের সাথে লালা মিশ্রিত হয়।

গিজার্ড

ক্রপের শেষ অংশ পেশিবহুল ত্রিকোনাকার যে অংশ থাকে তাকে গিজার্ড বলা হয়। গিজার্ডে কাইটিন যুক্ত প্লেট ও দাঁত থাকে।

কাজঃ গিজার্ডের দাত খাদ্যকে চূর্ণবিচূর্ণ করে।

২। মধ্য পৌষ্ঠিকনালি (Midgut)

গিজার্ড থেকে শুরু করে অন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত পাকস্থলী বা ভেন্ট্রিকুলাস(Ventriculus) এবং গ্যাস্ট্রিক সিকা নিয়ে মধ্য পৌষ্টিকনালি গঠিত।

পেরিট্রফিক পর্দা

মেসেন্টেরন বা মধ্য পৌষ্টিকনালির অন্তপ্রাচীরের  গাত্র তন্তুময় আবরণী দিয়ে আবৃত থাকে একে পেরিট্রফিক পর্দা (Peritrophic membrane) বলে।

এই পর্দা খাদ্যকে সরাসরি অন্ত্রের গায়ে লাগতে না দিয়ে মেসেন্টেরনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

পাকস্থলী

গিজার্ডের নিচে অবস্থিত থলির মত অংশ কে পাকস্থলী বলে।পাকস্থলীর প্রাচীর পাতলা। এটি পেরিট্রফিক পর্দা দ্বারা আবৃত। এতে গিজার্ডের মত কিউটিকল থাকে না।

কাজঃ এনজাইম এর সাহায্যে পরিপাক শুরু হয়।

গ্যাস্ট্রিক সিকা/হেপাটিক সিকা

অগ্র ও মধ্য পৌষ্টিকনালির সংযােগস্থলে ছয় জোড়া ফাঁপা, লম্বা, মােচাকৃতির থলি থাকে। এদের গ্যাস্ট্রিক সিকা (Gastric Caeca) / হেপাটিক সিকা বলে ।

কাজঃ পরিপাককারী এনজাইম ক্ষরণ করে।যকৃত সিকার অন্তঃপ্রাচীর থেকে এ্যামাইলেটিক; প্রােটিওলাইটিক ও লাইপােলাইটিক উৎসেচক নিঃসৃত হয়ে যথাক্রমে শ্বেতসার, আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য পরিপাক করে।

৩। পশ্চাৎ পৌষ্টিকনালি (Hindgut)

এটি ইলিয়াম, কোলন, মলাশয় ও পায়ু নিয়ে গঠিত। এটি কিউটিকল দ্বারা পরিবৃত।

ইলিয়াম

পাকস্থলীর ঠিক নিচে অবস্থিত প্যাঁচবিহীন প্রথম অংশকে ইলিয়াম বলে।এর ভেতরের প্রাচীরে রোম যুক্ত অনুদৈর্ঘ্য ভাঁজ বিদ্যমান।এই ভাঁজযুক্ত অংশ কপাটিকার মত কাজ করে।

কাজঃ খাদ্য পরিপাক ও পরিশোষণ করে।

মালপিজিয়ান নালিকা

মধ্য ও পশ্চাৎ পৌষ্টিকনালি সংযােগস্থলে পীতবর্ণের ম্যালপিজিয়াল নালিকা থাকে।প্রতি গুচ্ছে প্রায় ১৫টি করে মোট ৬-৮টি গুচ্ছে ম্যালপিজিয়াল নালিকা সাজানো থাকে।এরা রেচনে অংশগ্রহণ করে।

কোলন

ইলিয়ামের পরবর্তী সরু ও লম্বা  অংশকে কোলন বলে।এটা অসম আকৃতির।কোলনের ব্যাস ইলিয়ামের ব্যাস অপেক্ষা বেশি।

কাজঃ পরিপাককৃত খাদ্যের সরল অংশ বা খাদ্যসার শোষণ করে।

মলাশয়/রেকটাম

পশ্চাৎ পৌষ্টিক নালির শেষ অংশকে মলাশয় বলে।এটা মোটা এর প্রাচীর বেশ পুরু।ভেতরের প্রাচীরে ছয়টি ভাঁজ রয়েছে।ভাঁজগুলোকে রেকটাল প্যাপিলা বলে।

কাজঃ মল হতে অতিরিক্ত পানি, খনিজ পদার্থ, অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি শোষণ করে। মল সৃষ্টি করে।

পায়ু

মলাশয় যে ছিদ্রের মাধ্যমে বাইরে উন্মুক্ত হয় তাকে পায়ু বলে।

(খ)পরিপাক গ্রন্থি (DIGESTIVE GLAND)

লালাগ্রন্থি, মধ্যঅন্ত্রের অন্তঃআবরণ (lining of the midgut) এবং হেপাটিক বা গ্যাস্ট্রিক সিকা (hepatic বা gastic caeca) ঘাস ফড়িং এর পরিপাক গ্রন্থির অন্তর্ভুক্ত এবং এরা প্রত্যেকেই পাচক রস (digestive juice) নিঃসরণ করে।

পাকস্থলী এবং অগ্র পৌষ্টিক নালির সংযােগস্থলে ছয় জোড়া গ্যাস্ট্রিক বা হেপাটিক সিকা থাকে। এরা ফাপা লম্বা কোণাকার।

খাদ্যগ্রহণ এবং পরিপাক (FOOD, FEEDING AND DIGESTION)

বিভিন্ন শাকসজীর বা শস্যের পাতা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। খাদ্যবস্তু মুখােপাঙ্গের সাহায্যে কর্তিত এবং পেষিত হয়। অগ্রপদ, ল্যব্রাম ও ল্যাবিয়ামের সাহায্যে খাদ্যবস্তু ধারে থাকে এবং মুখে প্রবেশ করায়।

মুখগহ্বরে লালাগ্রন্থির লালা নিঃসরণের মাধ্যমে খাদ্য নরম ও পিচ্ছিল হয়। ম্যান্ডিবল ও ম্যাক্সিলাসমূহ পেষণ কাজ সমাধা করে।

বিচূর্ণ এবং খন্ড খন্ড খাদ্যবস্তু গলবিল ও অন্ননালি হয়ে ক্রপে গিয়ে পৌঁছে। ক্রপ খাদ্যের অস্থায়ী ভাণ্ডার রুপে কাজ করে। অতঃপর ক্রপ হতে খাদ্য দ্রব্য গিজার্ডে প্রেরিত হয়। গিজার্ডে খাদ্যদ্রব্য কাইটিন নির্মিত

দাঁতের সাহায্যে পিষ্ট হয় এবং ক্ষুদ্রাকার কণায় পরিণত হয়। গিজার্ড হতে খাদ্যকণা মধ্য পৌষ্টিক নালিতে আসলে এর অন্তৰ্গাত্র হতে এবং গ্যাস্ট্রিক সিকা হতে পাচক রস নিঃসৃত হয়।

বিভিন্ন ধরনের এনজাইম যেমন, অ্যামাইলেজ (amylase), ট্রিপটেজ (tryptase), মলটেজ (maltase), ইনভার্টেজ (invertase), লাইপেজ (lipase) পাচক রসে থাকে, যা পরিপাক ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে এবং খাদ্যবস্তুকে সরল ও তরল খাদ্যে পরিণত করে। পাকস্থলিতে সরল ও তরল খাদ্যবস্তু পেষিত হয়।

মলাশয় অপাচ্য খাদ্যবস্তু হতে খনিজ লবণ ও পানি শােষণ করে। ফলে কঠিন অপাচ্য বস্তু মলরুপে পায়ু পথে নিষ্ক্রান্ত হয়।

Post a Comment

0 Comments