ঘাসফড়িং অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

HSC Biology: ঘাসফড়িং 

প্রশ্ন ও উত্তর- ১
১। পঙ্গপাল কী?
বিভিন্ন দেশের কৃষি বিভাগ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে ইংরেজি লোকাস্ট নামে পরিচিত এই পঙ্গপাল।
বাংলায় এর নাম পতঙ্গ, এটি এক জাতের ঘাসফড়িঙ।
স্বভাবে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ইঞ্চি খানেক দৈর্ঘ্যের এই পতঙ্গ, খাবারের জন্য নিজ প্রজাতির বিপুল সংখ্যক সদস্যের সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়।
সাধারণত একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। তখন একে পঙ্গপাল বলে।
ঘাসফড়িং  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর



২।প্রজনন কী?
প্রজনন (বা জনন) হল একটি জৈব প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জনিতৃ জীব থেকে নতুন স্বতন্ত্র জীব - "অপত্য" - তৈরি হয়।
প্রজনন সকল জীবের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য; প্রত্যেকটি জীবই প্রজননের ফসল।

৩। Insectকী?
কীট বা পোকা বা পতঙ্গ বা কীটপতঙ্গ (ইংরেজি: Insect) হল আর্থ্রোপোডা পর্বের অন্তর্গত অমেরুদন্ডীদের একটি শ্রেণী যাদের একটি করে কাইটিনযুক্ত বহিঃকঙ্কাল, একটি তিন খন্ডের দেহ (মস্তক, ধড় ও উদর), তিন জোড়া করে সংযুক্ত পা, জটিল পুঞ্জাক্ষি, এবং এক জোড়া করে শুঙ্গ বা এ্যান্টেনা রয়েছে।

৪।পুঞ্জাক্ষি কী?
উত্তরঃ পুঞ্জাক্ষি = পুঞ্জ/পুঞ্জীভূত + অক্ষি
নামের মধ্যেই পরিচয়। পুঞ্জাক্ষি হচ্ছে অসংখ্য সরল অক্ষির সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগিক অক্ষি। আর্থোপ্রোডা পর্বের প্রাণী যেমন- তেলাপোকা,ঘাসফড়িং, মাছি ইত্যাদি প্রাণীর চোখ হচ্ছে পুঞ্জাক্ষি।
৫। ওমাটিডিয়াম কী?
উত্তরঃ ঘাসফড়িংয়ের পুঞ্জাক্ষির প্রতিটি ষড়্ভুজাকার দর্শন একককে ওমাটিডিয়াম বলে
ওসেলাস বলতে কী বোঝায়?
ঘাসফড়িংয়ের দুটি পুঞ্জাক্ষির মাঝখানে তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলাস থাকে। প্রতিটি ওসেলাস স্বচ্ছ কিউটিকল নির্মিত লেন্স ও একগুচ্ছ আলোক সংবেদী কোষ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষ রঞ্জক পদার্থসমৃদ্ধ। ওসেলাসের তলদেশে মস্তিষ্কে গমনকারী স্নায়ুতন্ত্র অবস্থিত।

৬। নিম্ফ কী?
উত্তরঃ নিম্ফ (nymph) হল পতঙ্গের[ঘাসফড়িং] ছোট অবস্থা। ডিম থেকে নিম্ফ বেরোয়, তবে পূর্ণআংগ (adult) এ পাখা গজায় এবং জনন অংগ (sex organ) বড় (mature) হয়।

৭।রূপান্তর কী?
উত্তরঃ যখন একটি ভ্রূণের পূর্ণাঙ্গ দশা প্রাপ্তি কয়েকটি পর্যয়ক্রমিক পরিবর্তনীয় ধাপের মাধ্যমে ঘটে তখন এ ধরনের ভ্রূণোত্তর পরিস্ফুটনকে রূপান্তর বলে।

৭। রূপান্তর কত প্রকার ও কী কী? বর্ণনা কর।
উত্তরঃ রূপান্তর ২ প্রকার
ক। অসম্পূর্ণ রূপান্তর:
আকার, বর্ণ, ডানা ও জনন অঙ্গ ছাড়া যে রূপান্তরে অপরিণত অবস্থায় কোন প্রাণী পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর মত দেখায় এবং বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেবল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুগঠিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে রূপ নেয়, এ ধরনের রূপান্তরকে অসম্পূর্ণ রূপাšর বলে। অসম্পূর্ণ রূপান্তরে শিশু অবস্থায় প্রাণীকে নিম্ফ বলা হয । উদাহরণ- তেলাপোকার রূপান্তর।
খ। সম্পূর্ণ রূপান্তর:
যে রূপান্তরে শিশু অবস্থায় প্রাণী ও পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর মধ্যে কোনো আঙ্গিক মিল থাকে না এবং ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশু প্রাণী পূর্ণাঙ্গ অবস্থাপ্রাপ্ত হয়, সে ধরনের রূপান্তরকে সম্পূর্ণ রূপান্তর বলে। সম্পূর্ণ রূপান্তরে শিশু অবস্থায় প্রাণীকে লার্ভা বলে। উদাহরণ: মৌমাছি , প্রজাপতি প্রভৃতি পতঙ্গের রূপান্তর।
৮।মিথোজীবিতা কাকে বলে?
উত্তরঃ যখন যদি ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীব ঘনিষ্ঠভাবে সহাবস্থানের ফলে পরস্পরের কাছ থেকে উপকৃত হয়, তখন এ ধরনের সাহচর্যকে মিথোজীবিতা বলে।
৯।মেসোগ্লিয়া বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ Cnidraria জাতীয় প্রাণীদের এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিসের মাঝখানে অবস্থিত ০.১স ব্যাসবিশিষ্ট, জেলির মতো আঠালো, স্থিতিস্থাপক, পাতলা, বর্ণহীন এবং উভয় কোষস্তর নিঃসৃত অকোষীয় স্তরটির নাম মেসোগ্লিয়া। এতে স্নায়ুতন্তু আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। মেসোগ্লিয়া বহিঃ ও অন্তঃত্বকের প্রবর্ধনগুলোর সংযুক্তি তল হিসেবে কাজ করে।
১০।। নেমাটোসিস্ট কী?
উত্তরঃ নেমাটোসিস্ট: কোষের ভেতরে প্রোটিন ও ফেনলে গঠিত হিপনোটক্সিন নামক বিষাক্ত তরলে পূর্ণ এবং একটি লম্বা, সরু, ফাঁপা ও প্যাঁচানো সূত্রকযুক্ত স্থূল প্রাচীরের ক্যাপসুলকে নেমাটোসিস্ট বলে।
১১। উপযোজন কী?
উত্তরঃ উপযোজন যে সমস্ত আচরণ বা কার্যাবলী দ্বারা প্রানী বা তার কোন অঙ্গ পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ায় ঐসকল আচরণ বা কার্যাবলীকে বোঝাবার জন্য মনস্তত্ত্ববিদ জেমস মার্ক বালডউইন (James Mark Baldwin) সর্বপ্রথম এই পদটি ব্যবহার করেন। উপযোজন হলো সামঞ্জস্য বিধান বা খাপ খাওয়ানো
প্রানী যখন কোনো জায়গা বদল না করে অর্থাৎ বস্তু ও চোখের মধ্যকার দূরত্ব অপরিবর্তিত রেখেই যে কোনো দূরত্বে অবস্থিত বস্তুকে সমান স্পষ্ট দেখার জন্য চোখে বিশেষ ধরনের পরিবর্তন ঘটায় তখন ঐ প্রক্রিয়াকে উপযোজন বলে।

১২। হিমোসিল কী?
উত্তরঃ রক্তপূর্ণ দেহ গহ্বরকে হিমোসিল বলে। যে প্রাণীগুলোতে হিমোসিল বিদ্যমান: প্রজাপতি, চিংড়ি, আরশোলা, কাঁকড়া ইত্যাদি।

১৩। ঘাস ফড়িং এর বৈজ্ঞানিক নাম লিখ।
উত্তরঃ ঘাস ফড়িং= Schistocera gregaria
১৪। নিষেক কী?
উত্তরঃ নিষিক্তকরণ (ইংরেজি: Fertilisation) একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যাতে গ্যামিটদ্বয়ের মিলনের মধ্য দিয়ে একই প্রজাতির নতুন একটি জীব উৎপাদনের সূত্রপাত হয়। প্রাণীর ক্ষেত্রে শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং কালক্রমে ভ্রূণ গঠন করে। নিষিক্তকরণ প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রজনন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।
নিষেক নিষিক্তকরণের বিকল্প শব্দ। প্রাণীর প্রজাতির উপর নির্ভর করে নিষেক স্ত্রী-প্রজাতির দেহের ভিতরে অন্তঃনিষেক প্রকিয়ায় বা দেহের বাইরে বহিঃনিষেক প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। নতুন প্রাণ তৈরি হবার সম্পূর্ণ এ প্রক্রিয়াকে প্রোক্রিয়েশন এবং এর জন্য প্রজাতিসমূহের কার্যাবলীকে প্রজনন বলে।
১৫। স্কে্লেরাইট কী?
উত্তরঃ স্ক্লেরাইট : পতঙ্গ শ্রেণির প্রাণীদের প্রতিটি দেহখণ্ডের কিউটিকলকে স্কেলরাইট বলে।
বা ঘাসফড়িং-এর দেহ কাইটিন নির্মিত কিউটিকল নামক বহিঃকঙ্কালে আবৃত। প্রতিটি দেহখণ্ডকে কিউটিকল পুরু ও শক্ত পাতের মতো গঠন সৃষ্টি করে। এদের স্ক্লেরাইট বলে।
১৬।মালপিজিয়ান নালিকা কী?
উত্তরঃ মালপিজিয়ান নালিকা : ঘাসফড়িংয়ের পরিপাক নালিসংলগ্ন কতগুলো সরু নালিকা, যা রেচন কাজ সম্পন্ন করে।
১৭।।গ্যাস্ট্রিক সিকা কী?
উত্তরঃ হিপাটিক সিকা : অগ্র ও মধ্যপৌষ্টিকনালির সংযোগস্থলের ছয় জোড়া ফাঁপা, লম্বা, মোচাকৃতির থলি থাকে। এদের গ্যাস্ট্রিক সিকা বা হিপাটিকা সিকা বলে। গ্যাস্ট্রিক সিকা পাচকরস নিঃসৃত করে।
১৮। মুখোপাঙ্গ বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ কীট পতঙ্গের মুখের অঙ্গগুলোকে ।
১৯।ডায়াপজ কী?
উত্তরঃ ডায়াপোজ : প্রতিকূল আবহাওয়ার (শীতকালে) কারণে পতঙ্গের ডিমে পরস্ফুটন বন্ধ থাকে। এ অবস্থাকে ডায়াপোজ বলে।
২০।দ্বিস্তরী প্রাণী কাকে বলে?
উত্তরঃ দ্বিস্তরী প্রাণী : যেসব প্রাণীর ভ্রূণ অ্যাক্টোডার্ম ও অ্যান্ডোডার্ম নামক দুটি নির্দিষ্ট স্তরে বিন্যস্ত থাকে, তাদের দ্বিস্তরী প্রাণী বলে।
২১। অস্টিয়া কী?
উত্তরঃ অস্টিয়া : ঘাসফড়িংয়ের হৃৎপিণ্ড ৭টি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি প্রকোষ্ঠের দুই পাশে একটি করে ছিদ্র থাকে। এদের অস্টিয়া বলে।
২২। হাইপোগ্যান্থাস অর্থ কী?
উত্তরঃ হাইপোগন্যাথাস - মুখছিদ্র নিম্নমুখী হয়ে মস্তকের নিচের দিকে অবস্থান করা
২৩। ওভিপজিটর কী?
উত্তরঃ ওভিপজিটর - ডিম পাড়ার অঙ্গ (স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ে বিদ্যমান]স্ত্রী ফড়িং কচি ফলের নিচের দিকে ওভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে।
২৪। ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া লিখ।
উত্তরঃ ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া (Mechanism of blood circulation)
☺
এই প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে সম্পাদিত হয়। বর্ণনার সুবিধার্থে কয়েকটি ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:
ধাপ১: মস্তকের সাইনাস থেকে রক্ত পেরিভিসেরাল সাইনাসে প্রবেশ।
ধাপ২: অ্যালারি পেশির সংকোচনের ফলে রক্ত পেরিভিসেরাল সাইনাস থেকে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে প্রবেশ। অন্যদিকে রক্ত পশ্চাৎমুখী হয়ে পেরিভিসেরাল সাইনাস থেকে পেরিনিউরাল সাইনাসে প্রবেশ।
ধাপ৩: হৃৎযন্ত্রের প্রকোষ্ঠের প্রসারণের ফলে রক্ত হৃৎযন্ত্রের অস্ট্রিয়া(ছিদ্র) দিয়ে হৃৎযন্ত্রের গহ্বরে প্রবেশ।
ধাপ৪: হৃৎগহ্বর রক্তপূর্ণ হলে হৃৎযন্ত্রের প্রকোষ্ঠ সংকুচিত হয়ে রক্ত সম্মুখ অ্যাওর্টাতে প্রবেশ করে।
ধাপ৫: সম্মুখ অ্যাওর্টা থেকে মস্তকের সাইনাসে প্রবেশ করে চক্রটি পুনরায় সম্পাদিত হয়।
২৫। হেড ক্যাপসুল কী?
উত্তরঃ The head capsule bears most of the main sensory organs, including the antennae, ocelli, and the compound eyes. It also bears the mouthparts
২৬।টিনিডিয়া কী?
টিনিডিয়া : ট্রাকিয়ার অভ্যন্তরীণ গাত্র কাইটিন নির্মিত সর্পিলাকার চক্র দ্বারা সুরক্ষিত। এদের টিনিডিয়া বলে।
২৭। বায়ুথলি : ঘাসফড়িংয়ের কতগুলো ট্রাকিয়া প্রসারিত হয়ে বড় এবং পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট বায়ুথলি তৈরি করে। বায়ুথলিগুলো বাতাস সঞ্চিত রাখে।
২৮। অসম্পূর্ণ রূপান্তর : আকার, বর্ণ, ডানা ও জনন অঙ্গ ছাড়া যে রূপান্তরে অপরিণত অবস্থায় কোনো প্রাণী পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে রূপ নেয় এবং পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর সঙ্গে অপরিণত প্রাণীর আকৃতিগত মিল থাকে, তাকে অসম্পূর্ণ রূপান্তর বলে। অসম্পূর্ণ রূপান্তরের শিশু অবস্থায় প্রাণীকে নিম্ফ বলে। উদাহরণ— ঘাসফড়িং ও তেলাপোকার রূপান্তর।
২৯। টারগাম : স্কেলরাইটের পৃষ্ঠীয় অংশকে টারগাম বলে।
৩০। স্টারনাম : স্কেলরাইটের অঙ্কীয় অংশকে স্টারনাম বলে।
৩১। প্লিউরন : স্কেলরাইটের পার্শ্বীয় অংশকে প্লিউরন বলে।
৩২। টেগমিনো : ২ জোড়া ডানা। প্রথম জোড়া ডানা সরু ও শক্ত, একে টেগমিনা বলে। এরা ওড়ার কাজে ব্যবহৃত হয় না। ওড়ার সময় ডানা দুটি প্রসারিত রেখে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
৩৩। ক্রপ : পতঙ্গ শ্রেণির প্রাণীদের পরিপাকনালির অন্ননালির পরবর্তী অংশ। এটি পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট থলির মতো অংশ। এখানে খাদ্য সাময়িকভাবে জমা থাকে।
৩৪। হিমোলিম্ফ : ঘাসফড়িংয়ের রক্ত বর্ণহীন। এদের রক্তকে হিমোলিম্ফ বলে। হিমোলিম্ফ প্লাজমা ও হিমোসাইট নিয়ে গঠিত।
৩৫।টিনিডিয়াম : ট্রাকিয়ার ভেতরে কাইটিন নির্মিত ইন্টিমা আংটির মতো বলয় গঠন করে। এদের টিনিডিয়াম বলে। টিনিডিয়া থাকায় ট্রাকিয়ার গহ্বর চুপসে যায় না।
৩৬।প্রশ্নঃ ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহন তন্ত্র কয়টি প্রধান অংশে বিভক্ত? কী কী?
উত্তরঃ ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহন তন্ত্র ৩টি প্রধান অংশে বিভক্ত:
হিমোসিল,হিমোলিম্ফ ও পৃষ্ঠীয় বাহিকা
৩৭। প্রশ্নঃ হিমোসিল কী? এর গঠন লিখ?
হিমোসিল হল রক্তপূর্ণ একটি গহ্বর। এতে ২টি পর্দা আর ৩টি প্রকোষ্ঠ বা সাইনাস আছে। পর্দা দুটি হল অঙ্কীয় ও পৃষ্ঠীয় পর্দা। আর এরাই আড়াআড়িভাবে হিমোসিলকে ৩টি সাইনাসে বিভক্ত থাকে:
১। পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস: পৃষ্ঠীয় পর্দার উপরে অবস্থিত। এই সাইনাসের ভেতরেই থাকে হৃৎযন্ত্র।
২। পেরিভিসেরাল সাইনাস: পৃষ্ঠীয় পর্দা ও অঙ্কীয় পর্দার ভেতরে অবস্থিত। এই সাইনাসের মাঝে থাকে পৌষ্টিকনালি।
৩। পেরিনিউরাল সাইনাস: অঙ্কীয় পর্দার নিচে অবস্থিত। এই সাইনাসের মাঝে থাকে স্নায়ুরজ্জু (nerve cord)।
পর্দাগুলো ছিদ্রযুক্ত। ফলে সহজেই রক্ত এক সাইনাস থেকে অপর সাইনাসে চলাচল করতে পারে।
৩৮। প্রশ্নঃ হিমোসিলের কাজ কী?
→ অঙ্গ, রক্ত ও লসিকা ধারণ
→ খাদ্যরস ও বর্জ্যবস্তুর পরিবহন
৩৯।হিমোলিম্ফের কাজ লিখ।
→ খাদ্যসার, রেচনদ্রব্য, হরমোন ইত্যাদির পরিবহন
→ অ্যামিনো অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি জমা রাখা
→ জীবাণু ধ্বংস করা
→ রক্ত তঞ্চনে(blood coagulation) সাহায্য করা
→ ডানার সঞ্চালন ও খোলস মোচনে সাহায্য করা
৪০।প্রশ্নঃ ঘাসফড়িং-এর রক্ত প্রবাহের গতিপথ লিখ।
উত্তরঃ ঘাসফড়িং-এর রক্ত প্রবাহের গতিপথ
পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস → হৃৎযন্ত্র → সম্মুখ অ্যাওর্টা → মস্তকের সাইনাস → পেরিনিউরাল সাইনাস → পেরিভিসেরাল সাইনাস
৪১। প্রশ্নঃ ঘাসফড়িং- এর পৌষ্টিকতন্ত্র কয়টি অংশ নিয়ে গঠিত? কীকী?
উত্তরঃ ঘাসফড়িং- এর পৌষ্টিকতন্ত্র ২টি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত:
১। পৌষ্টিকনালি
২। পৌষ্টিকগ্রন্থি
৪২। প্রশ্নঃ ঘাসফড়িং- এর পৌষ্টিকনালি (Alimentary canal) কয়টি অঞ্চলে বিভক্ত ? কীকী?
উত্তরঃ পৌষ্টিকনালি ৩টি অঞ্চলে বিভক্তঃ ১। অগ্র-পৌষ্টিকনালি বা স্টোমোডিয়াম ২। মধ্য-পৌষ্টিকনালি বা মেসেন্টেরন ৩।পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালি বা প্রোক্টোডিয়াম
৪৩। প্রশ্নঃ অগ্র-পৌষ্টিকনালি বা স্টোমোডিয়াম এর অংশগুলো কী কী? বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ মুখছিদ্রঃ মুখছিদ্র নামক ছিদ্রটি থাকে সিবেরামের গোড়ায়। সিবেরাম হল এক ধরনের প্রাকমৌখিক প্রকোষ্ঠ (pre-oral cavity)।
গলবিলঃএর মাধ্যমে খাদ্যবস্তু গ্রাসনালিতে প্রবেশ করে।
গ্রাসনালিঃ সোজা ও নলাকার নালি যার মাধ্যমে খাদ্যবস্তু ক্রপে পৌঁছায়।
ক্রপঃ গ্রাসনালি স্ফীত হয়ে তৈরি করে ক্রপ। ক্রপের সংকোচন-প্রসারণে খাদ্য কিছুটা চূর্ণ হয়।
গিজার্ড বা প্রোভেন্ট্রিকুলাসঃ গিজার্ডের আরেক নাম প্রোভেন্ট্রিকুলাস (Pro-ventriculus)। ক্রপের পরবর্তী ত্রিকোণাকার অংশটিই হল গিজার্ড। গিজার্ডের ভেতরের প্রাচীর ভাঁজ হয়ে কাইটিন নির্মিত ৬টি দাঁতের একটি বলয় গঠন করে। দাঁতের পেছনে থাকে রোম এবং এর পরের অংশে থাকে কপাটিকা। এই কপাটিকাগুলো খাদ্যকে বিপরীত দিকে যেতে দেয় না আর রোমগুলো কাজ করে ছাঁকনি হিসেবে। গিজার্ডের সংকোচন-প্রসারণে খাদ্য চূর্ণ হয়।
৪৪। প্রশ্নঃ মধ্য-পৌষ্টিকনালি বা মেসেন্টেরন এর বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ মধ্য-পৌষ্টিকনালি বা মেসেন্টেরনঃ এটা গিজার্ড থেকে উদরের মধ্যাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ভ্রূণীয় এন্ডোডার্ম থেকে সৃষ্ট এই অংশটির প্রাচীর বেশ পাতলা। কেননা অন্তঃপ্রাচীর পুরু কিউটিকলের বদলে পেরিট্রপিক পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। গিজার্ড এবং মেসেন্টেরনের সংযোগস্থলে থাকে ৬ জোড়া লম্বা থলির মতো গ্যাস্ট্রিক সিকা। এদের হেপাটিক সিকাও বলা হয়। প্রতি জোড়া হেপাটিক সিকার একটি সামনে গিজার্ডের দিকে ও অপরটি পেছনের দিকে প্রসারিত থাকে। মেসেন্টেরনের সাথে পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালির সংযোগস্থলে থাকে অসংখ্য ম্যালপিজিয়ান নালিকা। এরা মূলত রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
৪৫।প্রশ্নঃ প্রোক্টোডিয়াম কী? এর অংশগুলোর বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালি বা প্রোক্টোডিয়ামঃ ভ্রূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভূত এই অংশটি পৌষ্টিকনালির শেষ অংশ। এর অন্তঃপ্রাচীর কিউটিকল দিয়ে আবৃত। নিচের অংশগুলো নিয়ে এটা গঠিত
ইলিয়ামঃ পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালির প্রথম অংশ। এটা বেশ প্রশস্ত এবং এর প্রাচীরের মাধ্যমে পরিপাককৃত খাদ্যরস শোষিত হয়।
কোলনঃ ইলিয়ামের পেছনে অবস্থিত সরু নলাকার অংশ। এতে পানি ও খাদ্যবস্তুর অবশিষ্ট শোষিত হয়।
রেক্টামঃ পৌষ্টিকনালির সর্বশেষ অংশ হল রেকটাম। এটা বেশ স্ফীত ও পুরু প্রাচীরযুক্ত। এর অন্তঃপ্রাচীরে ৬টি ভাঁজ রয়েছে যাদের বলে রেকটাল প্যাপিলা। অতিরিক্ত পানি, খনিজ লবণ ও অ্যামিনো এসিড শোষণ করাই এর কাজ। তার সাথে সাথে অপাচ্য অংশগুলোকে এটা সাময়িকভাবে জমা রাখে।
পায়ুছিদ্রঃ রেকটামের শেষ প্রান্তে ও ১০ম দেহখণ্ডকে অবস্থিত ছিদ্রপথ। এর মাধ্যমে অপাচ্য অংশ মল হিসেবে বের হয়ে যায়।
৪৬। প্রশ্নঃ ঘাসফড়িং-এ কয় ধরনের পৌষ্টিকগ্রন্থি থাকে? তাদের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ ঘাসফড়িং-এ ৩ ধরনের পৌষ্টিকগ্রন্থি থাকে
লালাগ্রন্থিঃ এটা ঘাসফড়িং-এর প্রধান পৌষ্টিকগ্রন্থি। ক্রপের নিচে শাখাপ্রশাখাযুক্ত ১ জোড়া লালাগ্রন্থি থাকে। এদের থেকে নিঃসৃত লালারস (Saliva) খাদ্য গিলতে ও চিবাতে সাহায্য করে। কিছু শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাকেও এর ভূমিকা দেখা যায়।
হেপাটিক সিকা ঃ গিজার্ড এবং মেসেন্টেরনের সংযোগস্থলে থাকে ৬ জোড়া লম্বা থলির মতো হেপাটিক সিকা। এরা অনেকটা কোন (cone) আকৃতির। এরা এনজাইম নিঃসৃত করে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।
মেসেন্টেরনের অন্তঃপ্রাচীরের গ্রন্থিঃ মেসেন্টেরনের অন্তঃপ্রাচীরে কিছু কোষ আছে যা এনজাইম ক্ষরণ করে গ্রন্থির মতো আচরণ করে।
৪৭।ভেনাস হার্ট কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হার্টের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত প্রবাহিত হয় সে ধরণের হার্টকে ভেনাস হার্ট বলে।

Post a Comment

0 Comments