ঘাসফড়িং এর শ্বসনতন্ত্র ও শ্বসন প্রক্রিয়া
ঘাসফড়িং এর শ্বসনতন্ত্র
শ্বসন (Respiration)
যে শারীরবৃত্তীয় জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়ায় জীবকোষ স্থিত খাদ্যসার (গ্লুকোজ) পরিবেশ থেকে গৃহীত 02 এর সাহায্যে নির্দিষ্ট উৎসেচক উপস্থিতিতে জারিত হয়ে খাদ্যস্থিত স্থিতিশক্তিকে গতিশক্তিতে পরিবর্তিত করে এবং উপজাত দ্রব্য হিসাবে সৃষ্ট পানি ও CO2 দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত করে, তাকে শ্বসন বলে।
শ্বসনতন্ত্র
যে তন্ত্রের মাধ্যমে শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে শ্বসনতন্ত্র বলে।
ট্রাকিয়া নামক এক ধরনের শ্বাসনালী ও তাদের শাখা-প্রশাখার সমন্বয়ে ঘাসফড়িং এর শ্বসনতন্ত্র গঠিত। এই তন্ত্রকে তাই ট্রাকিয়ালতন্ত্র বলা হয়। ঘাসফড়িং এর ট্রাকিয়ালতন্ত্র নিম্নলিখিত অংশসমূহ নিয়ে গঠিত।যথাঃ
শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (Spiracle)
ঘাস ফড়িং এর দেহের প্রতিপাশে দশটি করে মােট দশ জোড়া শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল আছে।প্রথম দুইজোড়া বক্ষে এবং অবশিষ্ট আট জোড়া উদরে অবস্থিত। শ্বাসরন্ধ্রগুলাে বিশেষ ধরনের পেশি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কপাটিকার সাহায্যে বন্ধ ও উন্মুক্ত হয়।
ট্রাকিয়া (Trachea) বা শ্বাসনালি
প্রতিটি শ্বাসরন্ধ্রের অ্যাট্রিয়াম ট্রাকিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে। ট্রাকিয়া স্থিতিস্থাপক। ট্রাকিয়ার ভেতরে কাইটিন নির্মিত ইন্টিমা আংটির মতাে বলয় গঠন করে। একে টিনিডিয়া (Ctenidia) বলে।
টিনিডিয়াম থাকায় ট্রাকিয়ার গহ্বর চুপসে যায় না। দেহে ট্রাকিয়া জালিকার মতাে বিন্যস্ত থাকলেও এদের মধ্যে প্রধান কতকগুলাে নালি অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থভাবে বিন্যস্ত থাকে। এগুলােকে ট্রাকিয়াল কাণ্ড (Trachial trunk) বলে।
মােট ৩ জোড়া অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড দেহের দৈঘ্য বরাবর বিন্যস্ত থাকে। যথা-
(i) দেহের দু’পাশে দুটি পার্শ্বীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড।
(ii) মধ্যরেখায় দুটি পৃষ্ঠীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড।
(iii) অঙ্কীয় অঞ্চলের স্নায়ু রজ্জুর দুপাশে দুটি অঙ্কীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড।
দেহের প্রতিপাশে অবস্থিত পার্শ্বীয় ট্রাকিয়াল কাণ্ড থেকে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় দিকে কতকগুলাে অনুপ্রস্থ ট্রাকিয়াল কাণ্ড সৃষ্টি হয়। এরা যথাক্রমে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় ট্রাকিয়াল কাণ্ডকে যুক্ত করে। ঘাসফড়িংয়ের শ্বসন তন্ত্রের বিশেষত্ব হলো-এর কতকগুলাে ট্রাকিয়া প্রসারিত হয়ে মস্তক, বক্ষ ও উদর অঞ্চলে বড় আকারের বায়ু থলি (air sac) গঠন করে। বায়ু থলিতে বায়ু সঞ্চিত থাকে এবং শ্বসনের সময় বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
কাজঃ ট্রাকিয়া সারাদেহে শ্বসন গ্যাস পরিবহন করে।
ট্রাকিওল কোষ (Tracheole cell)
ট্রাকিয়াগুলো বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পরিশেষে বহুভুজাকার কোষে মিলিত হয়। এই কোষকে ট্রাকিওল কোষ বা প্রান্তীয় কোষ বলে । কোষগুলাে পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট ও এতে সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস থাকে।
কাজ : এরা ট্রাকিওলের মাধ্যমে দেহকোষের সাথে সংযােগ রক্ষা করে।
ট্রাকিওল (Tracheole)
ট্রাকিওল কোষ থেকে উৎপন্ন সরু সরু শাখাকে ট্রাকিওল বলে । এদের প্রাচীরে ইন্টিমা ও টিনিডিয়া থাকে না। প্রতিটি শাখার শেষপ্রান্ত তরল পদার্থে পূর্ণ থাকে। একে প্রান্তীয় থলি (End sac) বলে ।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে প্রবেশ করে এরা সরাসরি দেহকোষের সংস্পর্শে আসে ।
কাজ : দেহকোষ ও ট্রাকিয়ার মধ্যে O, ও CO, এর আদান-প্রদান ঘটানােই ট্রাকিওলের কাজ।
শ্বসন কৌশল (Mechanism of Respiration)
ঘাসফড়িংয়ের রক্তে শ্বাসরঞ্জক না থাকায় রক্ত শ্বসনে সহায়তা করে না । ঘাসফড়িংয়ের দেহকোষ ট্রাকিয়া ও ট্রাকিওলের মাধ্যমে সরাসরি বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে।
এর শ্বসন পদ্ধতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ। শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ প্রধানত শ্বাসরন্ধ্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । সম্মুখে চারজোড়া শ্বাসরন্ধ্র শুধু বায়ু প্রবেশের জন্য অর্থাৎ প্রশ্বাসের জন্য এবং পশ্চাতের ছয় জোড়া শ্বাসরন্ধ্র শুধুমাত্র বায়ু নির্গমন বা নিঃশ্বাসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
উদরের পেশিসমূহের সংকোচন ও প্রসারণের কারণে শ্বাসরন্ধ্রগুলাে খােলে ও বন্ধ হয়।
শাসগ্রহণ বা প্রশ্বাস (Inspiration)
শ্বাসগ্রহণের সময় উদরীয় পেশির প্রসারণে উদরীয় খণ্ডকগুলাে প্রসারিত হলে ট্রাকিয়ার গহ্বরের আয়তন বেড়ে যায় এবং প্রথম ৪ জোড়া শ্বাসরন্ধ্র খুলে যায় ফলে অক্সিজেন যুক্ত বায়ু শ্বাসরন্ধ্রের মাধ্যমে।
ট্রাকিয়া হয়ে ট্রাকিওলের মধ্য দিয়ে প্রান্তীয় থলিতে পৌছে এবং সেখানে তরলের সংস্পর্শে এসে দ্রবীভূত হয় । এই দ্রবীভূত অক্সিজেন ট্রাকিওলের পাতলা প্রাচীর ভেদ করে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দেহকোষে প্রবেশ করে।
শ্বাসত্যাগ বা নিঃশ্বাস (Expiration)
দেহকোষে বিপাকের ফলে সৃষ্ট CO2 ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ট্রাকিওল রসে আসে সেখান থেকে ট্রাকিয়ায় পৌছে।
এই সময় উদরীয় পেশির সংকোচনে উদরীয় খণ্ডকগুলাে সংকুচিত হওয়ায় ট্রাকিয়ার গহ্বরের আয়তন কমে যায় ও বাকি ছয়টি শ্বাসরন্ধ্র খুলে যায়।
ফলে ট্রাকিয়ায় অবস্থিত CO2 সজোরে শ্বাসরন্ধ্র পথে দেহ থেকে বের হয় । ট্রাকিয়ার মাধ্যমে পরিবাহিত হওয়ার সময় কিছু পরিমাণ CO2 হিমােসিলে আসে এবং সেখান থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কিউটিকল দিয়ে বের হয়ে যায় ।
0 Comments