পুঞ্জাক্ষি ও দর্শন কৌশল /ঘাস ফড়িং

ঘাস ফড়িংয়ের পুঞ্জাক্ষি ও দর্শন কৌশল

Table Of Contents
  1. ঘাসফড়িংয়ের পুঞ্জাক্ষি (Compound eye)
  2. ওমাটিডিয়ামের গঠন
    • ১। কর্নিয়া (Cornea)
    • ২। কর্নিয়াজেন কোষ (Corneagen cell)
    • ৩। ক্রিষ্টালাইন কোণকোষ (Crystaline cone cell)
    • ৪। ক্রিস্টালাইন কোণ (Crystaline cone)
    • ৫। আইরিশ রঞ্জক আবরণ (Iris pigment sheath)
    • ৬। রেটিনুলার কোষ (Retinular cell)
    • ৭।র‍্যাবডম (Rhabdom)
    • ৮। রেটিনাল সিথ (Retinal sheath)
    • ৯। ভিত্তি পর্দা (Basal membrane)
    • ১০। স্নায়ুতন্তু (Nerve fibre)
  3. দৰ্শন কৌশল (Mechanism of vision)
    • ১। অ্যাপােজিশন প্রতিবিম্ব (Apposition image)
      • প্রক্রিয়া
      • সময়
    • ২। সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব (Superposition image)
      • প্রক্রিয়া
      • সময়

ঘাসফড়িংয়ের পুঞ্জাক্ষি (Compound eye)

পুঞ্জাক্ষি ও দর্শন কৌশল /ঘাস ফড়িং


ঘাসফড়িংয়ের মস্তকের উভয় পাশে কালাে, বৃন্তহীন, বৃক্কাকার, উত্তল গঠনকে পুঞ্জাক্ষি বলে।

প্রতিটি পুঞ্জাক্ষি প্রায় ১২০০ থেকে ১৮০০ টি দর্শন একক বা ওমাটিডিয়াম (Ommatidium) নিয়ে গঠিত। পুঞ্জাক্ষিতে অবস্থিত প্রতিটি ওমাটিডিয়ামের গঠন কার্যপদ্ধতি একই রকম।

ওমাটিডিয়ামের গঠন

 স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিবিম্ব গঠনে সক্ষম পুঞ্জাক্ষির প্রতিটি সরলাক্ষি বা দর্শন একক বা একক আলােক সংবেদী অঙ্গকে ওমাটিডিয়াম বলে।

একটি ওমাটিডিয়াম ১০টি অংশ নিয়ে গঠিত। নিচে ঘাসফড়িংয়ের ওমাটিডিয়ামের গঠন বর্ণনা করা হলাে-

১। কর্নিয়া (Cornea)

এটি ওমাটিডিয়ামের বাহিরের দিকে অবস্থিত। এটি কিউটিকল নির্মিত ছয়কোণ বিশিষ্ট স্বচ্ছ আবরণ ।

কাজঃ কর্নিয়া লেন্সের মতাে কাজ করে ।

২। কর্নিয়াজেন কোষ (Corneagen cell)

কর্নিয়ার ঠিক নিচে একজোড়া কর্নিয়াজেন কোষ পাশাপাশি অবস্থান করে।

কাজঃ পুরাতন কর্নিয়া পরিত্যক্ত হলে এদের নিঃসৃত রসে নতুন কর্নিয়া সৃষ্টি হয় ।

৩। ক্রিষ্টালাইন কোণকোষ (Crystaline cone cell)

এগুলাে কর্নিয়াজেন কোষের নিচে অবস্থিত, লম্বা চারটি কোষ। এরা ক্রিষ্টালাইন কোণকে ঘিরে রাখে।

কাজঃ এসব কোষের নিঃসৃত রস দিয়ে ক্রিষ্টালাইন কোণ গঠিত হয় ।

৪। ক্রিস্টালাইন কোণ (Crystaline cone)

ক্রিস্টালাইন কোণকোষগুলাে দিয়ে পরিবেষ্টিত স্বচ্ছ, মােচাকৃতির অংশকে ক্রিস্টালাইন কোণ বলে।

কাজঃ এর মাধ্যমে আলােক রশ্মি প্রতিসরিত হয় ।

৫। আইরিশ রঞ্জক আবরণ (Iris pigment sheath)

কর্নিয়াজেন কোষ ও ক্রিস্টালাইন কোণ কোষগুলাে একটি । কালাে রঙের আবরণী দিয়ে আবৃত থাকে। একে আইরিশ রঞ্জক আবরণ বলে। তীব্র আলােকে এই আবরণী । প্রসারিত হয়ে কোণ কোষগুলােকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করে। আবার মৃদু আলোকে সংকুচিত হয়ে কোণ কোষগুলােকে আংশিক মুক্ত রেখে প্রতিবিম্ব গঠনকে প্রভাবিত করে।

৬। রেটিনুলার কোষ (Retinular cell)

এরা আকারে লম্বা এবং সংখ্যায় সাতটি। এদের নিউক্লিয়াস অগ্রপ্রান্তে অবস্থিত। এরা ক্রিস্টালাইন কোণ কোষের নিচে বৃত্তাকারে সাজানাে থাকে।

কাজঃ এদের নিঃসৃত রসে র্যাবড়ােম গঠিত হয়।

৭।র‍্যাবডম (Rhabdom)

এটি রেটিনুলার কোষগুলাের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত লম্বা দণ্ডের মতাে অংশ । রেটিনুলার কোষ নিঃসৃত রসেই এটি গঠিত ।

কাজঃ  র‍্যাবডম প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় ।

৮। রেটিনাল সিথ (Retinal sheath)

এরা রঞ্জক কোষযুক্ত কালাে পর্দার আবরণী । এরা আইরিশ কোষের গােড়াকে এবং রেটিনুলার কোষকে বেষ্টন করে রাখে।

কাজঃ একটি ওমাটিডিয়ামকে তার পার্শ্ববর্তী ওমাটিডিয়াম থেকে পৃথক রাখে ।

৯। ভিত্তি পর্দা (Basal membrane)

ওমাটিডিয়াম যে পাতলা পর্দার ওপর অবস্থান করে তাকে ভিত্তি পর্দা বলে।

কাজঃ এটি ওমাটিডিয়াকে ধারণ করে।

১০। স্নায়ুতন্তু (Nerve fibre)

প্রতিটি রেটিনুলার কোষ থেকে স্নায়ুতন্তু বের হয়ে অপটিক স্নায়ুর সাথে যুক্ত থাকে।

কাজঃ এরা ওমাটিডিয়ামে সৃষ্ট প্রতিবিম্বকে মস্তিষ্ককে প্রেরণ করে ।

দৰ্শন কৌশল (Mechanism of vision)

কর্নিয়া, কর্নিয়াজেন কোষ, ক্রিস্টালাইন কোণ, আইরিশ রঞ্জক কোষ ও রেটিনাল রঞ্জক আবরণের মধ্য দিয়ে আলােক ওমাটিডিয়ামের পরবর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং রেটিনুলার কোষ ও র্যাবডোম অঞ্চলে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়।

ঘাসফড়িংয়ের চক্ষুতে উজ্জ্বল আলােকে এক ধরনের এবং স্তিমিত আলােকে আর এক ধরনের প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় । উজ্জ্বল আলােকে যে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় তাকে অপােজিশন প্রতিবিম্ব এবং স্তিমিত আলােকে যে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় তাকে সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব বলে।

১। অ্যাপােজিশন প্রতিবিম্ব (Apposition image)

উজ্জ্বল আলােকে ঘাসফড়িং এর প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতিকে এপপাজিশন বা মােজাইক প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতিবলে। এই পদ্ধতিতে গঠিত প্রতিবিম্বকে এ্যাপােজিশন প্রতিবিম্ব বা মােজাইক প্রতিবিম্ব বলে।

প্রক্রিয়া

এ সময় ওমাটিডিয়ামের আইরিস পিগমেন্ট আবরণ প্রসারিত হয়ে র্যাবডোমগুলোকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করে। ফলে প্রতিটি ওমাটিডিয়াম পরস্পর হতে পৃথক হয়ে যায়।

বস্তুর অংশ বিশেষ হতে আগত উলম্ব আলােকরশ্মিগুলাে ওমাটিডিয়ামে প্রবেশ করে এবং যথাক্রমে কর্ণিয়া ও ক্রিস্টালাইন কোণ  হয়ে র্যাবড়ােমে প্রবেশ করে। কিন্তু তীর্ষক আলােকরশ্মিগুলাে কর্ণিয়ার মাধ্যমে প্রবেশ করলেও আইরিশ পিগমেন্ট আবরণ দ্বারা শোষিত হয়।

ফলে প্রতিটি ওমাটিডিয়ামে পৃথক পৃথক প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। এভাবে কয়েকটি ওমাটিডিয়াম একত্রে কোন বস্তুর আংশিক বা সম্পূর্ণ ও স্পষ্ট প্রতিবিম্ব গঠন করে।

সময়

দিনের বেলা বা যে কোন সময় উজ্জল আলােতে এ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন প্রতিবিম্ব খুবই স্পষ্ট কিন্তু খন্ডিত হয়।

এই প্রতিবিম্বকে মােজাইক প্রতিবিম্ব বা এপােজিশন প্রতিবিম্ব বলে।

২। সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব (Superposition image)

স্তিমিত বা মৃদু আলােতে আরশােলার প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতিকে সুপারপােজিশন প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতিতে গঠিত প্রতিবিম্বকে সুপারপােজিশন প্রতিবিম্ব (Super Position) বলে।

প্রক্রিয়া

স্থিমিত বা মৃদু আলােকে ওমাটিডিয়ামের আইরিস পিগমেন্ট আবরণ কর্ণিয়ার দিকে এবং রেটিনুলার সীথ নীচের দিকে সংকুচিত হয়। ফলে র্যাবডোমের নীচের অংশ ও রেটিনুলার কোষের উপরের অংশ অনাবৃত হয়।

বস্তু থেকে আগত উলম্ব আলোক রশ্মিগুলাে এদের বরাবর অবস্থিত  ওমাটিডিয়ামগুলাের কর্ণিয়া ও মোচার মধ্য দিয়ে র্যাবডোমে পৌছায়।

কিন্তু তীর্যক রশ্মিগুলো কোন নির্দিষ্ট ওমাটিডিয়ামের কর্ণিয়ার মধ্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী ওমাটিডিয়ামসমূহে প্রবেশ করে। ফলে কোন একটা ওমাটিডিয়ামের র্যাবডোমে বস্তুর একাধিক বিন্দু থেকে আগত অলােক রশি পতিত হয় এবং সম্মিলিতভাবে একটি সামগ্রিক, অস্পষ্ট, ও ঝাপ্সা  প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।

সময়

সাধারণতঃ রাতে বা যে কোন সময় স্তিমিত আলোতে ঘাসফড়িং এ প্রক্রিয়ায় দেখে। স্তিমিত আলোকে এই দর্শন প্রক্রিয়াকে সুপারপােজিশন দর্শন বলে।

Post a Comment

0 Comments