রক্ত সংবহনতন্ত্র(The Circulatory System) /ঘাসফড়িং

 

ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র

এই পাঠে যা রয়েছে-
  1. ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র(The Circulatory System)
    • হিমােসিল(Haemocoel)
      • (ক) পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (Pericardial Sinus)
      • (খ) পেরিভিসেরাল সাইনাস (Perivisceral sinus)
      • (গ) পেরিনিউরাল সাইনাস (Perineural sinus)
    • রক্ত
      • ১।রক্ত রস
      • ২। রক্ত কণিকা
    • হৃদপিন্ড (Heart)
    • অ্যালারি পেশি (Alary muscle)
    • আনুষঙ্গিক স্পন্দনশীল অঙ্গ
  2. সংবহন প্রক্রিয়া(Mechanism of Circulation)

ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র(The Circulatory System)

ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র(The Circulatory System)



যে তন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত দেহের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে বিভিন্ন পদার্থ পরিবহন করে, তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে।

ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র মুক্ত ধরনের। কারণ ঘাসফড়িং এর রক্ত নির্দিষ্ট রক্তনালীতে সীমাবদ্ধ না থেকে হিমােসিলের মাধ্যমে মন্থর গতিতে সরাসরি বিভিন্ন কোষের মধ্যে প্রবাহিত হয়। এ সংবহনতন্ত্রকে মুক্ত সংবহনতন্ত্র (Open circulation) বলে।

ঘাসফড়িংয়ের রক্ত সংবহনতন্ত্র কয়েকটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- রক্ত বা হিমােলিম্ফ, হিমােসিল, হৃৎপিণ্ড, অ্যালারিপেশি ও আনুষঙ্গিক স্পন্দনশীল অঙ্গ।

হিমােসিল(Haemocoel)

রক্তপূর্ণ দেহ গগহ্বর কে হিমোসিল বলে।ভ্রূণ অবস্থায় সিলোম ফেটে গিয়ে হিমোসিলের উদ্ভব ঘটে। ঘাসফড়িং এর দেহ গম্বর হিমােসিল (Haemocol) ধরনের।

এই দেহ গহ্বর একধরনের অপ্রকৃত দেহ গহ্বর। কারণ, এই গহ্বরের দুইপাশে মেসােডার্ম উদ্ভূত পেরিটোনিয়াল আবরণী নাই।

এই গহ্বর রক্ত দ্বারা পূর্ণ থাকে এবং চর্বিকোষ, পরিপাক তন্ত্র, রেচনতন্ত্র , শ্বসনতন্ত্র , প্রজননতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্রকে ধারণ করে। এই সকল তন্ত্রের অঙ্গসমূহ সরাসরি রক্তের মধ্যে অবস্থান করে এবং রক্ত দ্বারা ভিজে থাকে। ঘাসফড়িং এর রক্ত সাদা। একে হিমােলিম্ফ বলে।

এই হিমােলিম্ফ বা সাদা রক্ত একবার হৃদযন্ত্রের মধ্যে দিয়ে এবং পরবর্তীতে হিমােসিলের মধ্যে দিয়ে উনমুক্ত অবস্থায় প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ হিমােসিল রক্ত সংবহনতন্ত্রের (মেরুদণ্ডীদের শিরার মত) অংশ হিসাবে কাজ করে।

পৃষ্ঠীয় পর্দা এবং অঙ্কীয় পর্দা নামক দুটি অনুপ্রস্থ পর্দা দ্বারা হিমােসিল তিনটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত।

হৃৎপিণ্ডের তলদেশ বরাবর পর্দাকে পৃষ্ঠীয় পর্দা এবং স্নায়ুরজ্জর উপরে অবস্থিত পর্দাকে অঙ্কীয় পর্দা বলে ।

(ক) পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (Pericardial Sinus)

এই গহ্বর বা প্রকোষ্ঠ বা সাইনাস পৃষ্ঠীয় দেহ প্রাচীর ও পৃষ্ঠীয় পর্দার মধ্যস্থলে অবস্থিত। এই সাইনাস (Sinus – ফাকা বা গহ্বর) হৃদযন্ত্রকে ধারণ করে। {Peri: চারদিকে Cardial: হৃদযন্ত্র বিষয়ক ]।

(খ) পেরিভিসেরাল সাইনাস (Perivisceral sinus)

এই গহ্বর পৃষ্ঠীয় ডায়াফ্রাম বা পর্দা ও অঙ্কীয় ডায়াফ্রামের মধ্যস্থলে অবস্থিত। এই সাইনাসে পৌষ্টিক নালী অবস্থান করে।

(গ) পেরিনিউরাল সাইনাস (Perineural sinus)

এই সাইনাস অঙ্কীয় ডায়াফ্রাম ও অঙ্কীয় দেহ প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত। এই সাইনাস অঙ্কীয় স্নায়ুরজুকে (Ventral nerve cord) ধারণ করে।

হিমােসিলের কাজ

(i) হিমােসিল সকল তন্ত্রকে ধারণ করে।

(ii) রক্ত বা হিমােলিঙ্ক ধারণ করে ও রক্ত প্রবাহে অংশ নেয়।

[বিঃ দ্রঃ ঘাসফড়িং এর প্রকৃত সিলােম অবলুপ্ত প্রায় অবস্থায় পরিপাকতন্ত্র ও প্রজননতন্ত্রের ফাঁকে অবস্থিত। পরিস্ফুটণশীল ভ্রূণের সিলােম ও ব্লাস্টোসিল একসাথে মিলিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ ঘাসফড়িং এর হিমােসিল গঠিত হয়।

রক্ত

ঘাসফড়িং এর রক্ত বর্ণহীন। এটি হিমােসিল নামক দেহগহরে থাকে বলে একে হিমোলিম্ফ  বলে ।

ঘাসফড়িং এর রক্তের ২টি উপাদান। যথাঃ

১।রক্ত রস

এটি বর্ণহীন তরল। রক্তরসে বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ (যেমনঃ Na, K ও Ca লবণ) শর্করা,আমিষ ও ইউরিক এসিড বিদ্যমান। ঘাসফড়িং এর  রক্তে হিমােগ্লোবিন বা অন্য কোন শ্বাসরঞ্জক নাই।

২। রক্ত কণিকা

এদের রক্তে হিমােসাইট নামে বর্ণহীন শ্বেতকণিকা থাকে। এদের রক্ত রক্ত লােহিত কণিকা (R. B. C) এবং হিমােগ্লোবিনবিহীন।

কাজঃ ঘাসফড়িং এর  রক্ত শ্বাসরঞ্জক বিহীন বলে শ্বসনে রক্তের কোন ভূমিকা নেই। তবে রক্ত খাদ্যসার,পানি, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ইত্যাদি পরিবহণ করে।

হৃদপিন্ড (Heart)

ঘাসফড়িং এর একটি লম্বাটে, নলাকার হৃদপিন্ড থাকে। এটি বক্ষ ও উদরীয় অঞ্চলের পৃষ্ঠীয় দিকের মাঝ বরাবর পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস নামক গহ্বরে শায়িত থাকে।

পাতলা পর্দা বা ডায়াফ্রাম (diapragm) দ্বারা হৃদপিন্ডটি প্রধান দেহগহ্বর হতে পৃথক থাকে। হৃদপিন্ডটি দেহের প্রতিটি খন্ডে একটি করে মােচাকৃতি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত।

প্রতিটি প্রকোষ্ঠে পার্শ্বীয় দিকে একটি করে মােট একজোড়া ছিদ্র বিদ্যমান। ছিদ্রগুলােকে অস্টিয়া (ostia, sing ostium) বলে।

অস্টিয়ামে কপাটিকা (valve) থাকে, যাহা রক্তকে হৃদপিন্ডে কেবলমাত্র প্রবেশ করতে দেয় কিন্তু বাহির হতে দেয় না। হৃদপিন্ডটি ধারাবাহিকভাবে সজ্জিত অ্যালারি পেশির (alary muscle) সাহায্যে টারগামের সাথে আটকানাে থাকে।

অ্যালারি পেশি (Alary muscle)

টারগামের অঙ্কীয় তলের দু’পাশ থেকে অ্যালারি পেশি নামক ত্রিকোণাকার পাখার মতাে বিশেষ ধরনের পেশি উৎপন্ন হয়ে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসের প্রাচীরে যুক্ত হয় এবং হৃৎপিণ্ডের পার্শ্বীয় অঙ্কীয় দেশেও যুক্ত থাকে। ঘাসফড়িংয়ে ৬ জোড়া অ্যালারি পেশি থাকে। এদের সংকোচন প্রসারণ রক্ত সংবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

আনুষঙ্গিক স্পন্দনশীল অঙ্গ

ঘাসফড়িংয়ের অ্যান্টিনা, পদ ও ডানার গােড়ায় নানা আকৃতির পেশিযুক্ত ঝিল্লির মতাে অঙ্গ থাকে। এগুলাে স্পন্দনশীল । এদের সংকোচন প্রসারনে রক্ত সাইনাস থেকে বিভিন্ন অঙ্গে প্রবেশ করে ।

সংবহন প্রক্রিয়া(Mechanism of Circulation)

অ্যালারি পেশি, হৃদপিন্ড এবং আনুষঙ্গিক স্পন্দনশীল অঙ্গসমূহের সংকোচন প্রসারণের ফলে ঘাসফড়িংয়ের দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত প্রবাহিত হয়।

হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠগুলাে পশ্চাৎ থেকে সম্মুখদিকে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে থাকে। ঘাসফড়িংয়ের হৃদপিন্ডের স্পন্দন প্রতিমিনিটে ১০০ থেকে ১১০ বার ঘটে।

ঘাসফড়িংয়ের রক্তসংবহন প্রক্রিয়া নিম্নলিখিতভাবে ঘটে থাকে।

১। অ্যালারি পেশিগুলোর সংকোচনে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস থেকে অষ্টিয়ার মাধ্যমে হৃদপিন্ডে প্রবেশ করে।

২। পরে হৃদপিন্ড পর্যায়ক্রমে পশ্চাৎ দিক থেকে সম্মুখ দিকে সংকুচিত হওয়ায় রক্ত সমুখ দিকে প্রবাহিত হয় এবং অ্যাওর্টার মাধ্যমে মস্তকের সাইনাসে এসে পরে।

৩। অষ্টিয়ায় কপটিকা থাকায় রক্ত হৃদপিন্ড থেকে বাইরে আসতে পারে না এবং হৃদপিন্ডের প্রকোষ্টগুলাের সংযােগস্থলে কপাটিকা থাকায় রক্ত পিছন দিকে আসতে পারে না ।

৫। মস্তক থেকে কিছু রক্ত অ্যান্টিনায় প্রবেশ করে।

৫। এরপর রক্ত পশ্চাৎমুখী হয়ে পেরিনিউরাল সাইনাসে চলে আসে। পেরিনিউরাল সাইনাস থেকে রক্ত পদ ও ডানায় প্রবেশ করে।

৬। এই রক্ত পরবর্তীতে পশ্চাৎমুখী হয়ে পেরিভিসেরাল সাইনাসে প্রবেশ করে।

৭। এরপর হৃদপিন্ড যখন আবার প্রসারিত হয় তখন পেরিভিসেরাল সাইনাস থেকে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে ফিরে আসে।

৮। পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস থেকে অ্যালারি পেশিগুলোর সংকোচনে রক্ত অষ্টিয়ার মাধ্যমে পুনরায় হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। এভাবে চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে।


Post a Comment

0 Comments